জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও হামলা তদন্তের দাবি জানিয়েছেন সহিংসতায় নিহতের স্বজন ও ভুক্তভোগীরা। একইসঙ্গে সহিংসতা ও হামলার দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানান তারা।
রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংঘাতে আহত ও প্রত্যক্ষদর্শী কুকুমনি চাকমা। তিনি বলেন, ‘গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও স্বনির্ভর এবং রাঙামাটি শহরে পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চার জন নিহত ও শতাধিক আহত হন। গুরুতর আহত দুই জন চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন। দীঘিনালায় ১০৫টি দোকান ও রাঙামাটিতে ছোট-বড় অন্তত ১০০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘হামলাকারীরা রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের অফিসেও হামলা চালায়। সেখানে গ্যারেজে রাখা ৯টি গাড়ি ও একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মৈত্রী বিহারে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। হামলা শেষ হওয়ার পরই কেবল প্রশাসন রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি করে। ঘটনার পরদিন ২১ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা রাঙামাটি সফর করেন। অন্যদিকে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম দীঘিনালায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় জনগণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।’
তিনি বলেন, ‘২৬ সেপ্টেম্বর সরকার সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও হামলা, খুন ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত কাউকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি। অন্যদিকে পাহাড়িদের মধ্যে এখনও ভয় ও আতঙ্ক কাটেনি।’
এ সময় নিহত জুনান চাকমার মা রূপসী চাকমা এবং নিহত রুবেল ত্রিপুরার মা নিরন্তা ত্রিপুরা তাদের সন্তানের হত্যার সুষ্ঠুতদন্তের দাবি জানান। পাশাপাশি দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবিও জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো– জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ও অংশগ্রহণে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও স্বনির্ভর এলাকায় এবং রাঙামাটিতে পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও হামলার তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে; জানমালের ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয় করে তদন্ত কমিটির সুপারিশ ও নির্দেশনা অনুযায়ী আহত-নিহতদের পরিবার, ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; অতি দ্রুত বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসারত আহতদের সুচিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে; শেখ হাসিনা সরকারের পদায়িত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সঙ্গে জড়িত সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের বরখাস্ত এবং প্রচলিত ও সেনা আইনে বিচার করতে হবে; পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে রাজনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে এবং সেনাশাসন ও সেটলারদের প্রত্যাহার করতে হবে।