সোমবার, অক্টোবর ১৪, ২০২৪

২৯ আশ্বিন ১৪৩১

leading admission leading admission
সোমবার, অক্টোবর ১৪, ২০২৪
২৯ আশ্বিন ১৪৩১
সরকারি রেজিস্ট্রেশন নম্বর- ১৮২
আপনি পড়ছেন : মতামত

অভ্যুত্থান ও গণকলহ যখন বিভেদের রাজনীতির দিকে


ষড়ৈশ্বর্য মুহম্মদ
2024-09-05
 অভ্যুত্থান ও গণকলহ যখন বিভেদের রাজনীতির দিকে

জুলাই আন্দোলনের পর নতুন ধারায় আবার বিভাজনের রাজনীতি শুরু হয়েছে। ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত ও দলীয় ক্ষমতা এবং অন্যান্য স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্য থেকে এই বিভেদচর্চাকে একটা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ভাবাদর্শিক রূপ দেওয়ার প্রকট প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি অঙ্গনে এই বিষয়টি সম্ভবত অচিরেই একটি সাংঘাতিক রূপ লাভ করবে। তার কিছু আলামতও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। নানা ধরনের তালিকা ও প্রতিতালিকা তৈরি হচ্ছে সেখানে। কে আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন, কে আন্দোলনের বিপক্ষে ছিলেন, কারা আন্দোলনে মৌন ছিলেন, কারা ছিলেন সরব, রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কোন কোন পদ থেকে কাকে সরাতে হবে, সেসব পদে কাদের বসানো ঠিক হবে আর কাদের বসানো ঠিক হবে না— এসব নিয়ে প্রতিদিন ব্যাপক কূটক্যাচাল চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানে। পরিণামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, সংঘে ও সংস্থায় দেখা দিয়েছে গণকলহ ও অস্থিরতা, বিলম্বিত হচ্ছে সামাজিক স্থিতিশীলতা।

শিক্ষা, চিকিৎসা ও প্রশাসনসহ সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে যেন বিরাজ করছে অস্বাভাবিকতা। এই অস্বাভাবিককতা অভ্যুত্থানের শক্তির প্রতি অসন্তোষের জন্ম দিচ্ছে। জুলাই আন্দোলনের প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে শিক্ষক, সরকারি কর্মচারী, চিকিৎসকদের উৎখাতের চেষ্টা, তাদের ওপর হামলার মতো ঘটনাও আমরা দেখেছি এবং দেখছি। সরকারি কর্মচারী বিধি ও নীতির তোয়াক্কা না করে কিছু শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন যেমন আওয়ামী দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করেছেন, ঠিক তেমনই তাদের বিরুদ্ধে যে অবস্থান ও তৎপরতা শুরু হয়েছে তাতেও বিধি ও নীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ের সুবিধাভোগীরাও অনেক ক্ষেত্রে সুযোগ বুঝে নিজের অবস্থান পাল্টে নিজের আখের গোছানোর জন্য একজন আরেকজনকে ফাঁসিয়ে দিয়ে, ঘাড়ে পা দিয়ে, গায়ে ধাক্কা দিয়ে পদায়ন ও দখলের লড়াইয়ে নেমেছেন। এসব ক্ষেত্রে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী ও জনতাকে তারা ব্যবহার করছেন ঘুঁটি হিসেবে।

আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের একেবারে সাধারণ একাংশও নিজেদের অসাধারণ মনে করছেন, নিজেদের কর্তৃপক্ষ মনে করছেন এবং কর্তৃপক্ষীয় ভাষায় নানা ধরনের ঘোষণা দিচ্ছেন। এটা হয়। এমনটা ইতিহাসেও দেখা যায়। এটা খুব স্বাভাবিক যে, একটি কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার জন্য জনতাকে কর্তাশক্তিতে বলীয়ান হতে হয়, তাকে হুকুম ও নির্দেশ উপেক্ষা করেই বেপরোয়া আন্দোলন করতে হয়, নিজের হাতে আইন ও বিচার তুলে নিতে হয় এবং আন্দোলনকারী নিজেকেই হয়ে উঠতে হয় হুকুম ও নির্দেশদাতা। কিন্তু কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থাটির পতনের পর সমাজ ও রাষ্ট্রে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার জন্য সেই মানসিকতাটির রূপান্তরের প্রয়োজন পড়ে। ওই রূপান্তর যথার্থ না হলে আন্দোলনের ভেতর থেকেই জন্ম নেয় নতুন দানব, সমাজে ও রাষ্ট্রে এক কর্তৃত্ববাদের স্থলাভিষিক্ত হয় আরেক কর্তৃত্ববাদ, এক ফ্যাসিবাদের জায়গায় আসে আরেক ফ্যাসিবাদ, এক স্বৈরাচারের পতনের ভূমি থেকে জন্ম হয় আরেক স্বৈরাচারের।

উল্লিখিত পরিস্থিতি বোঝার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন বিপ্লব ও আন্দোলনের দিকে তাকানোর দরকার নেই। নিজের ইতিহাসের মধ্যেও বিস্তারিত অনুসন্ধানেরও প্রয়োজন নেই। মুক্তিযুদ্ধ থেকে এখনকার বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামী লীগ থেকে এখনকার আওয়ামী লীগ। এই পুরো পরিস্থিতির সুবিস্তৃত দিগন্তে একজন সামান্য মানুষের দিকে, কেবল একটি বাস্তব চরিত্রের দিকে চোখ রাখলেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। চরিত্রটি কবি আল মাহমুদ। জামায়াত-শিবির হিসেবে সবচেয়ে বেশি ট্যাগানো হয়েছে আল মাহমুদকে। এই ট্যাগানোর ফলটা এত খারাপ হয়েছে যে শেষপর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা আল মাহমুদকেও রাজাকার সমতুল্য করে তোলা হয়েছে এবং ঠেলে দেওয়া হয়েছে জামায়াত-শিবির বলয়ে। একাত্তর পরবর্তী সময় থেকে আমৃত্যু আল মাহমুদের রাজনৈতিক বাস্তবতাটা মনে রাখুন। কবি আল মাহমুদের জীবনীর মধ্যে যদি চোখ বোলান, তাকে যদি ইতিহাসের একটা চরিত্র ধরে নেন তাহলেই বাংলাদেশের বিভেদের রাজনীতির একটা পাঠ পেয়ে যাবেন।

আল মাহমুদের জীবন তথা একটু দূরের ওই অতীতের দিকে যদি না যেতে চান তাহলে সদ্য বিতাড়িত সরকারের দিকে চোখ ফেরান। পুরো আওয়ামী লীগের আমলজুড়ে আমাদের অনেককেও ট্যাগানো হয়েছে জামায়াত-শিবির বলে। শেষপর্যন্ত শেখ হাসিনাও আন্দোলনকারীদের ট্যাগিয়েছেন ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে।

আওয়ামী লীগ বলত জামায়াত-শিবির রাজাকার, আর এখন আপনারা বলছেন হাসিনার সমর্থক। এখন যারা আওয়ামী লীগ, হাসিনার ফ্যাসিবাদের সমর্থক বলে যাকে-তাকে ট্যাগাচ্ছেন, তারা জেনে বা না জেনে, অথবা মতলববাজি থেকে, কিংবা নিতান্ত অন্ধ ক্রোধ থেকে তা করছেন। এটা তো কর্তৃত্ববাদের ভাবাদর্শিক পোশাক, এটা তো তাদের হাতের মারণাস্ত্র, এটা তো তাদের বিভেদায়ন ও দানবায়নের মন্ত্র কিংবা জিকির। সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার সৈনিক এবং গণতন্ত্রকামীদের হাতে তো এ অস্ত্র মানায় না। রাজনীতিতে এসব বাজে জিনিস কিন্তু খুব দ্রুতই ব্যাকফায়ার করে, বুমেরাং হয়। আওয়ামী লীগের ঘাড় থেকে যে ভূত নামিয়েছেন সে ভূত যেন আবার আপনাদের আছর না করে।

যদি ধরে নিই আপনারা সবাই অন্যায়, অবিচার ও অনিয়ম দূর করার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন। আপনাদের পেছনে এসে যারা জড়ো হয়েছিলেন, তাদেরও কারও কারও অন্যায়, অবিচার ও অনিয়ম কায়েমের আকাঙ্ক্ষা ছিল, সেটা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। তাদের অনেকেই জালিমের মতো জুলুম শুরু করে দিয়েছে। সেই আকাঙ্ক্ষাই তাদেরকে এই আন্দোলনের মধ্যে সুযোগসন্ধানের জন্য তাড়িত করেছে এবং অনুপ্রবেশ করিয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের বিজয় ওই গুটিকয়ের হীন আকাঙ্ক্ষার বিজয় নয়। আন্দোলনের বিজয় এসেছে অজস্র মানুষের মহৎ আকাঙ্ক্ষায়। হীন আকাঙ্ক্ষার ওপর মহৎ আকাঙ্ক্ষার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলেই কেবল গণ-আন্দোলন সফল হতে পারে। যে কারণে যেকোনো বিপ্লব, যেকোনো সফল অভ্যুত্থানকে আমরা পবিত্র ধরে নিই, যে কারণে ওই আন্দোলনে প্রাণদানকারীকে আমরা শহীদ বলি। এটা শুধু আপনার-আমার দেশের সত্য নয়– এটা সারা দুনিয়ার সমগ্র ইতিহাসের চিরন্তন সত্য।

জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে, আপনারা মনে করবেন না যে, সবকিছু হাসিল হয়ে গেছে। মনে করবেন যে, ‘আমরা সফল হয়েছি বন্ধু, এবার তবে এসো হে বন্ধু ও ভাই, আমরা শত্রু খুঁজে ফিরি আর তাদের নানাভাবে দায়ী করে হেনস্তা ও হয়রানি করতে থাকি, তাদের কোণঠাসা করতে থাকি, তাদের জান কবজ করতে নেমে যাই।’ হ্যাঁ, আওয়ামী জামানার দুর্নীতিবাজ ও সরাসরি অপরাধে জড়িতদের আপনি শাস্তি দিতে পারবেন, কিন্তু তা-ও দিতে হবে একটা গ্রহণযোগ্য বিচারিক প্রক্রিয়ায়, নিজের মর্জিমতো নয়। দোষীদের জন্য সর্বজনীন ব্যবস্থা আছে, কিন্তু আওয়ামী লীগের সাধারণ সমর্থকদের আপনি হয়রানি ও কোনঠাসা করতে পারেন না। সেটা করলে বরং আপনাদের এই রক্তের বিনিময়ে পাওয়া সাধের নতুন স্বাধীনতাই নস্যাৎ হয়ে যাবে এবং পুরো ব্যাপারটাকে আপনারাই বেশি ঝুঁকিতে ফেলে দেবেন। মনে রাখবেন, ফ্যাসিস্ট হিসেবে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছে, এই ব্যর্থতার দায় আওয়ামী লীগ সমর্থকের নয়। রাষ্ট্রে যেমন রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য সুনাগরিকের লক্ষণ, আধুনিক রাষ্ট্রে এবং বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করাও ‍সুনাগরিকেরই আরেক বৈশিষ্ট্য।

জানবেন, আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার সময়টা কিন্তু হিটলার ও নাজি বাহিনীর চেয়েও লম্বা সময়। এত লম্বা সময় আওয়ামী লীগ শুধু জোর করে, ভয় দেখিয়ে, গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে, রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে দমন-পীড়ন চালিয়ে ক্ষমতায় থাকেনি। যারা রাষ্ট্র ও রাজনীতি সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা রাখেন তারা জানেন, শুধু এসব দিয়ে এত দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা যায় না। ক্ষমতায় থাকার রাজনীতি করার জন্য সমাজে নানা স্তরে শেকড় গাড়তে হয়। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে, নাগরিক সমাজে, গ্রামীণ সমাজে, ব্যবসায়ীদের মধ্যে, বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে, অধার্মিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে আওয়ামী এই শেকড় খুব গভীরে সঞ্চার করেছিল। আওয়ামী লীগে বেআওয়ামী লোকজনও ছিল, যে কারণে বারেবারে আওয়াজ উঠেছে, ‘হাইব্রিড, হাইব্রিড, আওয়ামী লীগে এরা হাইব্রিড।’ তার মানে আওয়ামী লীগ একেবারে বিপরীত মতাদর্শের লোকের ভেতরও শেকড় গেড়েছিল অথবা বিপরীত মতাদর্শীরা আওয়ামী লীগে ঢুকেছিল সুযোগ-সুবিধার জন্য। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার উৎখাতের পর ওইসব শেকড় কিছু কিছু এমনিই উপড়ে গেছে, কিন্তু কিছু আছে যেগুলো সহজে উপড়াবে না। আওয়ামী লীগের জনসমর্থনের হিসাবটা ভুলে গেলে চলবে না। আওয়ামী সরকার আমলে ক্ষমতার সুবিধাভোগীরা কেউ কেউ জেলে গেছে, অনেকেই পালিয়েছে। সমর্থকরা কিন্তু পালায়নি, তাদের পালাবার পথও নেই। এই জনগোষ্ঠীটিকে আপনার সমর্থকদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

মাত্র এক মাসের বৈপ্লবিক পরিস্থিতি দিয়ে সব অর্জন হয়ে গেছে, সব সাফল্য এসে গেছে, সব পেয়েছির দেশে এসে পৌঁছেছেন, এমন ভাববেন না। ব্যাপারটা অত সোজা না। বিপ্লবের লোকজন কিন্তু ঘরে ফিরে গেছে। আপনি আবার ডাকলে তারা আর আগের মতো না-ও আসতে পারে। ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে হিসেব করে দেখুন, জুলাইয়ের মতো গণপ্রতিবাদ ও প্রতিরোধ বছর বছর হয় না। এমন গণজোয়ারে সারা দেশকে এক সত্তায় পরিণত করতে বছরের পর বছর লেগে যায়।

ইতিহাস ও বাস্তবতার যে পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছেন সেটা আকাশ নয়, বরং সেখান থেকে সামনে আকাশটা দেখা যাচ্ছে কেবল। আর পেছনে তাকালেই দেখবেন, ঠিক পেছনেই বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত ও রক্তাক্ত যুদ্ধের ময়দান। যে ময়দান থেকে বিক্ষত বা অক্ষত অবস্থায় একটু উঁচুতে উঠে দাঁড়িয়েছেন আপনি-আপনারা, একটু ভুলচুক হলেই আবার ধপাস করে সেখানে পড়ে যাবেন। আপনাকে সেই ময়দানে টেনে নামানোর জন্য দৃশ্য ও অদৃশ্য অনেক ষড়যন্ত্রের ও প্রেমের ফাঁদ পাতা আছে, অনেক শত্রু ওঁত পেতে আছে। এই পর্যায়ে এসে চ্যালেঞ্জটা অনেক বড়, কামড়া-কামড়ি করে আর নিজেদের বিভাজিত করে খাল কেটে কুমির আনবেন না। নিজের পায়ে কুড়াল মারবেন না। বর্জন, বাতিল ও খারিজ নয়, বরং কীভাবে গ্রহণ, অভিযোজন ও সংযোজন করা যায় তা ভাবুন। সমাজ ও রাষ্ট্রে সবাইকে নিঃশ্বাস নিতে দিন। কারও গলা টিপে ধরবেন না, কারও দম আটকে ফেলবেন না।

মনে রাখবেন, রাষ্ট্র ব্যাপারটাই সর্বসম্মত না হওয়া সত্ত্বেও একটা সর্বসম্মত চুক্তি এবং রাষ্ট্রের সবকিছুই এমন অনিচ্ছুক সর্বসম্মতির ধারাবাহিকতা। ধরুন, খুব স্বাভাবিক ঘটনা হলো, সব ভোট আপনার দল পাবে না, তারপরও আপনি বেশি ভোট পেলেন বলে আপনার বিরোধী পক্ষগুলো আপনার দলকে সরকার হিসেবে মেনে চলবে। এই চুক্তি ও সম্মতির ওপর রাষ্ট্র ও সরকার দাঁড়িয়ে থাকে। মনে রাখবেন, রাষ্ট্র জিনিসটাই একটা জনবিরোধী ব্যাপার। নিজের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মতামত ক্ষুণ্ণ হবে জেনেও অধিকতর স্বার্থ ও সুবিধা লাভের আশায় এবং নিজেকে রক্ষার জন্য সেই রাষ্ট্রের কাছেই নিজেকে সমর্পণ করে মানুষ। মনে রাখবেন, যখনই আপনি রাষ্ট্রপক্ষ ঠিক তখন থেকেই আপনি অপর, তখনই জনগণ থেকে আপনি বিচ্যুত, ঠিক তখন থেকেই আপনাকে জনগণ শত্রুও ভাবতে থাকে, ঠিক তখন থেকেই জনগণ আপনার ওপর সতর্ক নজর রাখতে থাকে। অতএব, খুব সাবধান। জনগণ যে ভার আপনার ওপর অর্পণ করেছে, তার মর্যাদা রাখুন। যে রাষ্ট্রের কাছে বাধ্য হয়ে জনগণ নিজেকে সমর্পণ করে তার কাছে আপনিও নিজেকে সমর্পিত রাখুন, তা না হলে আপনারও রক্ষা নাই। মনে রাখবেন, লড়াই শেষে উদ্ধত রক্তাক্ত ছুরি নিয়ে ছোটা স্বাভাবিকতা নয়, বরং অস্বাভাবিক উন্মত্ততা। আপনার ছুরি রাষ্ট্রের কাছে সমর্পণ করুন। নিদেনপক্ষে ওই ছুরি ধুয়ে খাপে ঢুকিয়ে নিন।