গাড়ি চলে না, চলে না, চলে নারে..এভাবেই গাড়িতে বসে গান গাইছেন যাত্রী রবিউল ইসলাম। তিনি ঢাকা থেকে হবিগঞ্জ যাচ্ছেন। পথিমধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতায় যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছেন। এসময় মনের দুঃখে এই গান গেয়ে উঠেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়- গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা-সিলেট, এশিয়ান বাইপাস ও রূপসী-কাঞ্চন সড়কে দীর্ঘ যানজট লেগে আছে। ঈদের শেষ যাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কগুলোতে যানজট ব্যাপক আকারে দেখা দিয়েছে। শুক্রবার (১৪ জুন) ছুটির দিন হলেও এ দুই মহাসড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটারে যানজট লেগে থাকায় ঈদ যাত্রায় ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীরা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান বাইপাস সড়কের রূপগঞ্জের অংশ পার হতে সময় লাগে ২০-৩০ মিনিট। অথচ দীর্ঘ যানজটের কারণে এই অংশটুকু পার হতে ৪-৫ ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে।
চালক ও যাত্রীদের অভিযোগ, মহাসড়কের পাশে গরুর হাট, যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা, ঈদকে সামনে রেখে হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি, অবৈধ বাসস্ট্যান্ড, ফুটপাতে চাঁদাবাজি, লেন ভেঙ্গে বিপরীত লেনে গাড়ি চালানোর কারণে যানজট লেগে আছে ।
হাইওয়ে পুলিশ বলছে, ঈদ যাত্রায় একটু-আধটু সমস্যা হবেই। কারণ গাড়ির অনেক চাপ থাকে। তারপরও চেষ্টা চলছে যেনো নির্বিঘ্নে গাড়ি চলাচল করতে পারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি দেশের অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়ক। এ সড়কটি দিয়ে সিলেট, ভৈরব, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, গাজীপুর সহ দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক ও অন্যান্য গণপরিবহণ চলাচল করে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জ অংশের বরাবো, ভুলতাসহ বেশকয়েকটি স্থানে গরুর হাট বসানো হয়েছে। গরুর হাটের কারণে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
অবৈধ বাসস্ট্যান্ড, চাঁদাবাজি, যত্রতত্র যাত্রী উঠানো-নামানো, নিয়ম ভেঙে বিপরীত দিকে গাড়ি চলাচল, সরু সড়ক, হঠাৎ করে গাড়ি বিকল হয়ে যাওয়ার কারণেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে কাগজপত্র যাচাইয়ের নামে হাইওয়ে পুলিশ বেপরোয়া চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ করেন চালকরা। এসময় তারা পণ্যবাহী বিভিন্ন যানবাহন মহাসড়কে থামিয়ে চাঁদাবাজি করেন। তাতে আটকে যায় শতশত যানবাহন আর সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। আর এ যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে।
অপরদিকে, রূপগঞ্জ উপজেলার মধ্যদিয়ে গেছে দেশের ব্যস্ততম আরেকটি মহাসড়ক এশিয়ান বাইপাস। সড়কটি দিয়ে গাজীপুর, ময়মনসিংহ, টঙ্গী, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের যানবাহন চলাচল করেন। কাঞ্চন টোল প্লাজায় টোল গ্রহণে ধীরগতি, এশিয়ান বাইপাস সড়কের চার লেনে উন্নীত করণ, অবৈধ বালু মহাল ও যত্রতত্র যাত্রী উঠানামার কারণেও এই সড়কে যানজট লেগে থাকে।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বললে এক যাত্রী জানায়- দুপুরে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাজধানীর সায়দাবাদ থেকে গাড়িতে উঠেছেন। কিন্তু কাচঁপুর থেকে বরপা পর্যন্ত আসতেই ৪ ঘণ্টা লেগে গেছে। অথচ এতটুকু রাস্তা পার হতে সময় লাগে ১৫-২০ মিনিট। প্রতিনিয়ত এ সড়কে যানজট লেগেই থাকে।’
ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘যানজট নিরসনে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। সামনে ঈদ যাত্রা যাতে নির্বিঘ্ন হয় সে ব্যাপারে পুলিশ জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। চাঁদাবাজির বিষয়টি সঠিক নয়।’