ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মির বিধানসভায় জয়ী হয়েছে ফারুক আবদুল্লাহর দল ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেসের জোট। ৯০ আসনের এই বিধানসভায় ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেসের জোট পেয়েছে ৪৮টি আসন।
অন্যদিকে বিজেপি পেয়েছে ২৯টি। ভোটে জয়ের পরই জম্মু-কাশ্মিরের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ওমর আবদুল্লাহর নাম ঘোষণা করেছেন ফারুক আবদুল্লাহ। কারাগারে আটক থাকা নিরাপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি কাশ্মিরের গণমাধ্যমও অবাধ ও মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ জম্মু ও কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলে মঙ্গলবার শ্রীনগরে ফারুক আবদুল্লাহ ঘোষণা করেছেন। গত ১০ বছরের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মিরের প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস-এনসি জোটের জয় স্পষ্ট হওয়ার পরে প্রবীণ রাজনীতিবিদ এই ঘোষণা দেন।
ফারুক আবদুল্লাহ এদিন সাংবাদিকদের বলেন, “১০ বছর পর জনগণ আমাদের তাদের ম্যান্ডেট দিয়েছে। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি— যেন আমরা তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারি। এখানে ‘পুলিশের রাজত্ব নয়, এখানে জনসাধারণের রাজত্ব থাকবে’। আমরা নিরপরাধ ব্যক্তিদের জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করব। মিডিয়া স্বাধীন থাকবে। আমাদের হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে।”
সংবাদমাধ্যম বলছে, রাজ্যের মর্যাদা থাকা অবস্থায় জম্মু-কাশ্মিরে শেষবার ভোট হয়েছিল ২০১৪ সালে। বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা ২০১৯ সালে তুলে নেওয়ার পরে সেখানে আর বিধানসভা নির্বাচন হয়নি। তবে স্থানীয় ও লোকসভার ভোট নেওয়া হয়েছিল বর্তমান কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটিতে।
১০ বছর পর অনুষ্ঠিত এবারের বিধানসভা নির্বাচনে জম্মু ও কাশ্মিরে তিন দফায় ভোট নেওয়া হয়েছিল। এতে গড়ে ৬৩ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। যদিও ন্যাশনাল কনফারেন্সের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হয়েছিল, তবে কংগ্রেসের জেতা আসনের সংখ্যা দেখে বোঝা যাচ্ছে— দলটি সহযোগী দলের ভূমিকাতেই রয়েছে।
মঙ্গলবার ভোটের ফল স্পষ্ট হওয়ার পর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ আশা প্রকাশ করেন, ইন্ডিয়া জোটের অংশীদাররা এনসিকে জম্মু ও কাশ্মিরের রাজ্যত্ব তথা রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে সাহায্য করবে। মূলত কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পরে এই উপত্যকা বর্তমানে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হয়ে উঠেছে।
এসময় কাকে শীর্ষ পদ দেওয়া হবে জানতে চাইলে প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ ঘোষণা করেন, “ওমর আবদুল্লাহ বনেগা মুখ্যমন্ত্রী” অর্থাৎ (ওমর আবদুল্লাহ মুখ্যমন্ত্রী হবেন)।”
জম্মু-কাশ্মিরে ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেসের জোট পেয়েছে ৪৮টি আসন। বিজেপি পেয়েছে ২৯টি। অন্যদিকে রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির দল পিডিপি খুব খারাপ ফল করেছে। তারা মাত্র তিনটি আসন পেয়েছে। আম আদমি পার্টি ও সিপিআইএম একটি করে আসন পেয়েছে। স্বতন্ত্র সাতটি এবং অন্য একটি রাজ্যভিত্তিক দল একটি আসনে জিতেছে।
এনডিটিভি বলছে, ওমর আবদুল্লাহ আগে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সর্বশেষ নির্বাচনে এনসিকে আবার ক্ষমতায় নির্বাচিত করার জন্য ভোটারদের তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং বলেছেন, তার দল প্রমাণ করবে যে তারা ভোট পাওয়ার যোগ্য দল।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “পুরো ফলাফল এখনও আসেনি। আমরা তার পরে এই বিষয়ে কথা বলব। এনসি যেভাবে বিজয়ী হয়েছে, আমরা ভোটারদের কাছে কৃতজ্ঞ। জনগণ আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সমর্থন করেছে। এখন আমাদের চেষ্টা থাকবে— আমরা যে এই ভোটের যোগ্য সেটি প্রমাণ করা।”
প্রসঙ্গত, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ ২০০৯ সাল থেকে দলের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। ২০০৯ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গঠন করে ক্ষমতায় আসার পর কাশ্মিরের তরুণতম মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন ওমর আবদুল্লাহ। পরবর্তীতে তিনি বিরোধী দলনেতা ছিলেন দীর্ঘদিন।
এবার সেখানকার অন্যতম রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনী লড়াইয়ের ময়দানে নামে কংগ্রেস। অন্যদিকে বিজেপি এবং পিডিপি আলাদা ভাবে নির্বাচনে লড়েছে। পুরোটা শক্তি দিয়েই নির্বাচনের প্রচারণায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ।
অন্যদিকে রাহুল গান্ধীকে সামনে রেখেই রাজ্যে প্রচারণার কাজ চালিয়েছিল বিরোধী ইন্ডিয়া জোট।