ধারাবাহিকভাবে তৃতীয়বার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পদে শপথ গ্রহণ করলেন নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে টানা দশ বছর কাটানোর পর তার শরিক-নির্ভর তৃতীয় ইনিংস যে কিছুটা আলাদা হবে, তা আন্দাজ করেছিলেন অনেকেই। শপথ গ্রহণের দিনও সেই ছবি ফুটে উঠল মন্ত্রিসভার কাঠামোতে।
ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী ছাড়াও শপথ নিয়েছেন মন্ত্রিসভার পূর্ণমন্ত্রী এবং স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীরা।
এইবার লোকসভা ভোটে সংখ্যা গরিষ্ঠতা না থাকায় দিল্লির মসনদে শরিক-নির্ভর এই মন্ত্রিসভা, যেখানে ৭২ জন মন্ত্রীর মধ্যে ১১ জন শরিক দলের।
'ভারসাম্য' বজায় রেখে জোট সরকারের অন্তর্গত তেলুগু দেশম পার্টি, জনতা দল ইউনাইটেড, শিবসেনা (শিন্ডে গোষ্ঠী), লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস), জনতা দল সেকুলার, রাষ্ট্রীয় লোক দল, হিন্দুস্তানি আওয়ামী মোর্চা (এইচএএম), রিপাবলিকান পার্টি অফ ইন্ডিয়া থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে এই ১১ জন মন্ত্রীকে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর মন্ত্রিসভায় রয়েছে পুরানো এবং নতুন মুখ। রাজনাথ সিং, অমিত শাহ, নিতিন গডকড়ী, জগৎপ্রকাশ নাড্ডা, শিবরাজ সিং চৌহান, নির্মলা সীতারামন, এস জয়শঙ্করের মতো পুরানো মুখ। যদিও পূর্ববর্তী সরকারের তিন পরিচিত মুখ স্মৃতি ইরানি, অনুরাগ ঠাকুর এবং রাজীব চন্দ্রশেখর এবার ঠাঁই পাননি মন্ত্রিসভায়।
প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও রোববারের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে শপথ পাঠ করেছেন ৩০ জন পূর্ণমন্ত্রী, পাঁচজন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এবং ৩৬ জন প্রতিমন্ত্রী।
মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেলেন যারা
শরিকদের 'সন্তুষ্ট' করতে মূলত অঞ্চল ভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের উপর জোর দিয়েছে বিজেপি। যার ফলে মন্ত্রিসভায় ২৪ জন রাজ্য বা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের সাংসদদের রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে শরিকদের সঙ্গে ছন্দ মেলাতে গিয়ে আগের দুইবারের তুলনায় মোদীর মন্ত্রিসভা আয়তনে বেড়েছে।
২০১৪ সালে ৪৬ জন মন্ত্রী ছিলেন যা ২০১৯ এ গিয়ে দাঁড়ায় ৫৭ জনে। এইবার তা আরও বেড়েছে। তবে আকার বৃদ্ধি পেলেও বিজেপি যে রাশ তার নিজের হাতে রাখতে চাইছে সেটি নতুন সরকারে গেরুয়া শিবিরের মন্ত্রীদের সংখ্যা দেখলেই কিছুটা স্পষ্ট হয়।
এনডিএ সরকারের মন্ত্রীরা শপথগ্রহণ করলেও, তাদের মধ্যে কে কোন দফতরের দায়িত্বে থাকবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ডাকা বৈঠকের পর সেই ছবি স্পষ্ট হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই বৈঠকে দফতর বণ্টন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
তৃতীয় দফার মোদী সরকারের মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রীদের মধ্যে ২৫ জন বিজেপির। এই তালিকায় রয়েছেন গুজরাট থেকে নির্বাচিত রাজ্যসভা সাংসদ এস জয়শঙ্কর, তামিলনাড়ুর নির্মলা সীতারামন, হিমাচল প্রদেশের নেতা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা।
আছেন, উত্তরপ্রদেশের রাজনাথ সিং, গুজরাটের অমিত শাহ, মনসুখ মাণ্ডবীয়, সিআর পাটিল, মহারাষ্ট্রের নিতিন গডকড়ী, পীযূষ গয়াল, আসামের সর্বানন্দ সোনোয়াল, কর্নাটকের প্রহ্লাদ জোশী, হরিয়ানার মনোহরলাল খট্টর, ওড়িশায় ধর্মেন্দ্র প্রধান, জুয়েল ওরাওঁ, মধ্যপ্রদেশের বীরেন্দ্র কুমার, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, শিবরাজ সিংহ চৌহান, রাজস্থানের ভূপেন্দ্র যাদব, গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত, বিহারের গিরিরাজ সিং, ঝাড়খণ্ডের অন্নপূর্ণা দেবী, তেলঙ্গানার জি কিষাণ রেড্ডি। রাজস্থানের অশ্বিনী বৈষ্ণো, পাঞ্জাবের হরদীপ সিং পুরী। গেরুয়া শিবিরের রাজস্থানের অশ্বিনী বৈষ্ণো, পাঞ্জাবের হরদীপ সিং পুরীও রয়েছেন এই তালিকায়।
বিজেপির যে ৩৫ জন প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের শান্তনু ঠাকুর, সুকান্ত মজুমদার।
মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোটের কথা মাথায় রেখে গতবারের মতো এই বারেও যে শান্তনু ঠাকুরকে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেওয়া হবে তা আন্দাজ করেছিলেন অনেকেই। অন্যদিকে, বালুরঘাটের সংসদ সুকান্ত মজুমদার এই প্রথম মন্ত্রিসভায় স্থান পেলেন। তিনি এতদিন বিজেপির রাজ্যসভাপতির দায়িত্ব সামলে এসেছেন। সুকান্ত মজুমদারের পর ওই পদে কে আসবেন তা নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে।
এই দু'জন ছাড়াও প্রতিমন্ত্রীদের তালিকায় রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের জিতিন প্রসাদ, পঙ্কজ চৌধুরি, এসপি সিং বঘেল, কীর্তিবর্ধন সিং, বিএল বর্মা, কমলেশ পাসোয়ান, বিহারের নিত্যানন্দ রাই, সতীশচন্দ্র দুবে।
একই সঙ্গে রয়েছেন, জম্মু-কাশ্মীরের জিতেন্দ্র সিং, রাজস্থানের অর্জুন রাম মেঘওয়াল, ভগীরথ চৌধুরি, মহারাষ্ট্রের মুরলীধর মোহল, গোয়ার শ্রীপদ নায়েক, দিল্লির হর্ষ মলহোত্র, অন্ধ্রপ্রদেশের ভূপতিরাজু শ্রীনিবাস বর্মা, ছত্তীসগড়ের তোখন শাহু, হরিয়ানার কৃষ্ণপাল গুজ্জর, রাও ইন্দ্রজিৎ সিং এবং আসামের পবিত্র মার্গেরিটাসহ আরও অনেকে ।
বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় শরিকদের ছেড়ে দিতে হয়েছে পাঁচটি কেন্দ্রীয় পূর্ণমন্ত্রী, দুটো স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী আর চারটি প্রতিমন্ত্রীর পদও। সেই তালিকায় যারা রয়েছেন তারা হলেন তেলুগু দেশম পার্টি-র কিঞ্জারাপু রামমোহন নায়ডু, জনতা দল ইউনাইটডের লাল্লন সিং, জনতা দল সেকুলারের এইচডি কুমারস্বামী, লোক জনশক্তি পার্টি রামবিলাস-এর চিরাগ পাসোয়ান, হিন্দুস্থান আওয়ামী মোর্চার জিতনরাম মাঝিঁ রয়েছেন।
এনডিএ-এর শরিকদল থেকে যারা প্রতিমন্ত্রীর পদে রোববার শপথ নিয়েছেন তারা হলেন শিবসেনার প্রতাপরাও যাদব, রাষ্ট্রীয় লোকদলর জয়ন্ত চৌধুরী, রিপাবলিকান পার্টি অফ ইন্ডিয়া অঠওয়ালের রামদাস অঠওয়ালে, জেডিইউর রামনাথ ঠাকুর, আপনা দল (সোনেলাল)-এর অনুপ্রিয়া প্যাটেল এবং তেলেগু দেশম পার্টির চন্দ্রশেখর পেম্মাসানি।
প্রসঙ্গত, 'ভারসাম্য' বজায় রাখতে নতুন-পুরানো মিলিয়ে মুখ বেছে নেওয়া হয়েছে মন্ত্রিসভার জন্য। ওই তালিকায় যারা স্থান পেয়েছেন তাদের মধ্যে ৪৩ জন মন্ত্রীর দায়িত্ব আগে পালন করেছেন, ২৩ জন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। রয়েছেন সাতজন সাবেক মুখ্যমন্ত্রীও। তিনজন নতুন মুখও নতুন মন্ত্রিসভায় আছে।
২৯ অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি, ১০ জন তফসিলি, পাঁচজন সংখ্যালঘু এবং পাঁচজন জনজাতি সমাজের প্রতিনিধি আছেন এবারের মন্ত্রিসভায়।