সোমবার, অক্টোবর ১৪, ২০২৪

২৯ আশ্বিন ১৪৩১

leading admission leading admission
সোমবার, অক্টোবর ১৪, ২০২৪
২৯ আশ্বিন ১৪৩১
সরকারি রেজিস্ট্রেশন নম্বর- ১৮২
আপনি পড়ছেন : প্রযুক্তি

১৯৬৪ সালের কথা


কায়সার আহমেদ সোহাগ (ই-সময় প্রতিনিধি)ঃ
2020-12-01 10:20:30
১৯৬৪ সালের কথা

১৯৬৪ সাল
বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সভায় একটা বিল/দাবি উত্থাপন করলেন- "পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশে) চিত্তবিনোদনের জন্য কিছু সিনেমা হল চাই" সাথে সাথে পাকি এমপিদের (এমএনএ) প্রতিবাদ ভেসে এলো- আস্তাগফিরুল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ। হাস্যোরোল পড়ে গেল। জবাবে বঙ্গবন্ধু সেসব ভন্ডদের তুলোধুনো করলেন- "মাননীয় স্পিকার, পাকিস্তানের সিনেমা সারা ভারতবর্ষে খ্যাতির আসন জুড়ে আছে। পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিটি থানায় সিনেমা ঘর দাঁড়িয়ে আছে। তখন আপনাদের এই নাউজুবিল্লা কই থাকে? আপনাদের বেলায় মাশাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ আর আমরা বাঙ্গালিরা চাইলেই নাউজুবিল্লা? এসব ভন্ডামি ছাড়তে হবে। শুধু তা'ই নয়, একাত্তরের যুদ্ধের সময়ও তাদের দালাল গোলাম আযমেরা বাঙ্গালিকে পাকিস্তানীদের শোষণের যাতাকলে আটকে রাখতে মানুষের মধ্যে এই বলে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল যে, ইসলাম ধর্ম কায়েম রাখতে হলে পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখতে হবে। দেশ স্বাধীন হলে সবাই হিন্দু হয়ে যাবে। মসজিদ মাদ্রাসা থাকবেনা। আরো কত গুজব ছড়ানো হয়েছে। পচাত্তরের পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত একই কায়দায় মানুষকে বোকা বানিয়েছে- "আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে সব মসজিদ মন্দিরে পরিনত হবে। আজানের বদলে উলুধ্বনি ভেসে আসবে"। অথচ ইন্দিরা গান্ধির আপত্তি সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে ওআইসির মেম্বার করেছেন। বিশ্ব ইজতিমার আয়োজনকে সমৃদ্ধ করেছেন। ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন, কাকরাইলের মসজিদে জমি বরাদ্ধ দিয়েছেন এই বঙ্গবন্ধুই। বঙ্গবন্ধুই রেসকোর্সের জুয়া বন্ধ করেছেন বিপরীতে নকল মুসলমান জিয়া সংবিধানে বিসমিল্লাহ সংযোজন করে সাড়ে তিন'শ মদ-বারের লাইসেন্স দিয়েছে। এই হলো তাদের চরিত্র। ৫ ওয়াক্ত নামাজী যে শেখ হাসিনার দিন শুরু হয় ফজরের নামাজ আর কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সেই হাসিনাকে বলা হয় নাস্তিক, ইসলামের শত্রু, আর বেনামাজী মদ্যপ খালেদাকে পারলে তারা রিসালাত দিয়ে ফেলে। পাকিদালাল রাজাকার-আলবদরেরা ইসলামের লেবাসে সবসময়ই আমাদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে। একাত্তরে ধর্ম রক্ষার নামে তারা হানাদারবাহিনীর সাথে মিলে ধর্মবিরোধী সব পাপই করেছে। মদ পান, ধর্ষণ, নির্যাতন, নারী-বৃদ্ধ-শিশু হত্যা কিছুই বাদ যায়নি। এসব ধর্মবিরোধী পাপের জন্য আজও কেউই অনুতপ্ত নয়। এখনো তারা ধর্মের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে। জেনে না জেনে তাদের এই অপকর্মের সঙ্গী হয়েছে তাদের নাদান সমর্থকেরা। যাদের বেশিরভাগই অশিক্ষিত অথবা বিকৃত মস্তিষ্কের। সুস্থ মনের কেউ এসব পাপের সাথে জড়াতে পারেনা। বিশেষ করে যারা পরকালে ভয় করে। কেননা এই প্রতারণা কেবল মানুষের সাথে নয় সৃষ্টিকর্তার সাথেও। আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকারকারীরাই ধর্মের লেবাসে মানুষকে এভাবে ধোঁকা দিতে পারে, এটা ধার্মিকদের কাজ নয়। রাজাকারদের ফাঁসি ঠেকাতে হেফাজতের আশ্রয় নেয়া কাঠমোল্লারা শফী হুজুরকেও মিসগাইড করেছিল। পরে তিনি ভুল বুঝতে পেরে তাদের সংগ ত্যাগ করেন। এই ভুল ব্যাখ্যার কারণে দেশের অনেক আলেমই বঙ্গবন্ধু কন্যাকে নাস্তিক মুরদাত মনে করে। ফেসবুকের পাতায় জামায়াত শিবিরের পেজগুলোতে গোলাম আযম, নিজামী, সাঈদী, খালেদার মতো ইবলিশেরা ফেরেস্তার শামিল আর আমরা সত্যিকারের মুসলমানেরা তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করলেই নাস্তিক, মুরদাত, হিন্দু, ভারতের দালাল হয়ে যাই। তারা ওয়াজের নামে আওয়ামী লীগ, ভারতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। দেশের কিছু কিছু মসজিদেও আইএসআইয়ের দালাল আছে। তারাও বিশেষ বিশেষ দিনে পাকিদের পাঠানো স্লিপ মোতাবেক ফরমায়েশি বয়ান ঝাড়ে। তাদের কষ্টের কারণ ১৬ ডিসেম্বর, জয় বাংলা, শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, পহেলা বৈশাখ। বাঙ্গালির প্রত্যেকটা অর্জন তাদের মাথাকে এলোমেলো করে দেয়। আমাদের বিজয়ে তাদের মানসিক ভারসাম্য বিগড়ে যায়। আমাদের হিরোরা তাদের কাছে ভিলেন। আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা, কবি সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরা, দেশপ্রেমী নাগরিকেরা তাদের চক্ষুশুল। সাম্প্রতিক সাকিবের পুজা অনুষ্ঠান উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে এই অশুভচক্র এলাহী কারবার ঘটিয়েছে। অথচ বিএনপি নেতারা এমনকী তারেকও বহুবার একই কাজ করেছে, আপত্তি কেবল সাকিবদের ক্ষেত্রে। কেননা, সাকিবরা হাসিনার ভক্ত। দেশের গর্ব, শ্রেষ্ঠ সন্তান। দেশ এবং ধর্মের শত্রু মৌলবাদীরা বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য নিয়ে আপত্তি তুলেছে। পরে ফেসবুকের কল্যাণে আমরা সবাই জেনেছি যে, তাদের পেয়ারের দেশ পাকিস্তানের কায়েদে আজমের পুত্তলিকাও শোভা পাচ্ছে সারা জঙ্গিরাষ্ট্র জুড়েই। সাদ্দাম, এরদোগান, মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি, ইয়াসির আরাফাতের মতো রাষ্ট্রনেতাদের স্মৃতিরক্ষায় পৃথিবীর সব মুসলিম দেশেই ভাষ্কর্য শোভা পাচ্ছে। দেশের কোথাও কোথাও খুনি জিয়ার মূর্তিও দেখা যাচ্ছে। এসবের বিষয়ে ভন্ড মোল্লারা কখনো গলাবাজী করেনি। এর সব হালাল, আলহামদুলিল্লাহ, সুবহানআল্লাহ। ঠিক যেমনটা খালেদার বেলায়- ইসলামের নারী নেতৃত্ব হালাল আর হাসিনার বেলায় নাউজুবিল্লা, আস্তাগফিরুল্লাহ। এই নাউজুবিল্লার অপপ্র্যয়োগকারীদের ঘাড় ধরে এদেশ থেকে বের করে দিতে হবে। বন্ধ করতে হবে এসব ওয়াজ মাহফিলের নামে ভাওতাবাজী। এই দেশ পাকিদালালদের নয়, এটা ৩০ লক্ষ শহীদের দেশ। মুজিবের দেশ। আমাদের দেশ। যারা খায় আমাদেরটা আর গীত গায় পাকিস্তানের, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকার করে নিতে পারেনা, এদেশে তাদের থাকার অধিকার নেই। বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন চাই। আরো কঠিন আইন চাই যারা পবিত্র ধর্ম নিয়ে জোচ্চুরির রাজনীতি করে। মোল্লায় মোল্লায় সমকাম করে, এই নিয়ে কোনো মাহফিল গরম হয়না, মাদ্রাসায় ধর্ষণ হয়, বলৎকার হয়- এসব কবিরা গুনাহ নিয়ে আলেম সমাজ কখনো রাস্তায় নামেনা। তাদের ঈমানে আঘাত হয়না। সমস্যা হয় শহীদ মিনারে ফুল দিলে। টুঙ্গিপাড়ার কবরে শ্রদ্ধা জানালে কাঠমোল্লাদের গায়ে জ্বালা ধরে যায়। চন্দ্রিমা উদ্যানে গেলে তা হয়না। এসব ভূয়া আলেমদের গালে গালে জুতা মারা উচিৎ। তারা ধার্মিক না, ধর্মব্যবসায়ী জালিয়াত। বঙ্গবন্ধুও বলে গেছেন যে- ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করা চলবে না। এই ব্যবসা বন্ধ করণ কর্মসুচি নিয়ে আমরা রাজপথে নামলে একজন কাঠমোল্লাও দেশে থাকতে পারবেনা। আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে চাইনা। আইনের মাধ্যমেই সব বেআইনী কাজের দমন চাই। তা'না হলে তওহীদি জনতার সাথে দেশপ্রেমী বীর জনতার গণ্ডগোল লেগে যেতে পারে। শাপলা চত্তরের মতো আবারো কানধরা কান্ডের মঞ্চায়ন হতে পারে। অথবা তার চেয়েও খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারে। পুলিশ অনেক সময় ছেড়ে দেয় কিন্তু মুজিবসেনারা ধরলে দেশছাড়া না করে ঘরে ফেরেনা। আমরা অনেকদিন যাবৎ লগিবৈঠা হাতে ধরি না। তওহীদিকে যাও হীদি করতে বড্ড মন চায়।

আহমেদ সাইফুল্লা নান্টু"র ওয়াল থেকে-(সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু শিল্পী গোষ্ঠী)ঃ